Header Ads

test

অবহেলা " পর্ব-১" Best Romantic Love Story Bangla " Romantic Story,

গল্পঃ আপনজনের অবহেলা   

লেখকঃ M_A_Islam
পর্ব-১  

BEST STORY, ROMANTIC LOVE STORY, BANGLA ROMANTIC Story, Bengali Pratilipi Story, Viral Golpo, Premer Golpo,  Ekmutho valobasar golpo,
Obohela " Porbo-1" Best Romantic Love Story, 


আনমনে হেটে চলেছি রেল লাইনের  উপরদিয়ে ৷ আর দুচোখ বেয়ে অশ্রুফোটা টপটপ করে গাল বেয়ে নেমে চলছে ৷ গন্তব্য রেল স্টেশনের দিকে ৷ চলে যাচ্ছি আমার নিজের শহর ছেড়ে যেখানে নিজের মানুষের অবহেলার কারনে  আমাকে শহর ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে ৷  


ট্রেন চলে এসেছে  আমি চোখ মুছে ট্রেনে উঠে পড়লাম ৷ এবার আমি আমার পরিচয় টা দিয়ে নিই ৷ আমি মাহমুদ হাসান.  ৷ অনার্স 2 বর্ষে পড়ি ৷ আমার মা বাবা থাকতেই আমি অনাথ ৷ তাদের থেকে অনেকদুড়ে  চলে যাব ৷ যেন আমার মত একজন কুলাংকার ছেলে  তাদের পরিচয়  না দিই ৷ 


ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম ৷ সাইনবোর্ডো তাকিয়ে দেখি এই জায়গার নাম #খাগড়াঘাট #বহরমপুর ৷  আমি কিছুক্ষন স্টেশনে এক চেয়ারে বসে বসে মা বাবা আর ছোট ভাইটার কথা মনে পড়ছে আর দুচোখ বেয়ে  শুধু পানি পড়ছে ৷ শুধু একটা মানুষের জন্য আমকে আমার মা বাবা নিজের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন ৷ 


তবে আমিও ভেবে নিয়েছি কোন দিন নিজের শহরে যাবনা  ৷ আর মা বাবাকে আমার এই চেহারা দেখাবনা ৷ আর যে মানুষটার জন্য  আমার আজ এ অবস্থা তাকে আমি কোনদিন ক্ষমা করবনা ৷ আজীবন ঘৃনা করে যাব ৷ 


এখন একটা থাকার জায়গা করতে  তারপর  কলেজে ভর্তি হতে হবে ৷ কিন্তু কে সাহায্য করবে আমাকে ৷ আমিতো কাউকে চিনিনা  এখানে ৷  


এবার স্টেশন থেকে বেড়িয়ে শহরের দিকে   যাচ্ছি ৷ এভাবে হাটতে হাটতে কখন যে রাত হয়ে যায় মনে নাই ৷ আমি রাস্তার ল্যাম পোস্টের নিচে দাড়িয়ে আছি ৷ 


আর তখনি  একটা মেয়ে  দৌড়িয়ে এসে আমার পিছনে দাড়াল  ৷ তারপর আমি সামনে তাকিয়ে দেখি দুইটা মাতাল লোক মেয়েটাকে তাড়া করেছিল ৷ আমাকে দেখে লোক দুটো চলো গেল ৷ 


এবার আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম ৷ ল্যাম্প পোস্টের আলোয় মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে ৷  আমি বললাম আপনাকে কেন তাড়া করছিল  ওই দুটো লোক ৷ মেয়েটি কেদে কেদে বলল  আমি আমার এক বান্ধবীর বাসা থেকে আসছিলাম ৷ আর তখনি এই মাতাল লোক দুটি পিছু নেই ৷ আর তারপরে আপনার সাথে দেখা ৷ 


আমিঃ হুমমমম বুঝলাম আর কোন সমস্যা নেই  আপনি এখন যেতে পারেন ৷ লোক দুইটা পালিয়ে গেছে ৷ 


মেয়েটিঃ না আমার খুব ভয় পাচ্ছে আমি কোন দিন রাতে এভাবে এক একা বের হয়নি খুব ভয় পাচ্ছে আমায় ৷ আপনি যদি কিছু মনে না করতেন তাহলে আমাকে একটু বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসবেন ৷ 


আমি কিছুক্ষন ভেবে দেখলাম  আসলেই মেযেটি অনেক ভয় পেয়ে আছে  ৷ আর তাছাড়া একা একটা মেয়ে ৷ তাই আর কিছু না ভেবে তার সাথে যেতে চাইলাম ৷ 


মেয়েটিঃ আপনার নামটা কি জানতে পারি ৷ 


আমিঃ মাহমুদ৷ আপনার নাম কি ৷


মেয়েটিঃ আমার নাম তাহিয়া ৷ আমি অনার্স 1 বর্ষে পড়ি  ৷ বাড়িতে মা বাবা আর ছোট একটা বোন আছে ৷  আপনার ৷


আমিঃ আমি অনার্স 2 বর্ষে পড়ি ৷ আর আমি এতিম আমার কেউ নেই ৷ 【 মিথ্যা বললাম কারন  যারা আমাকে বিনা দোষে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে তাই তাদের পরিচয় না শ্রেয়】 ৷


এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আমারদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ৷ হয়ত আমার উপর মায়া হচ্ছে ৷ 


হাটতে হাটতে তাহিয়াদের বাসাই চলে আসলাম ৷ তাহিয়া রা বেশি বড়োলোক না আবার বেশি গরিব না ৷ মোটামুটি  এইরকম শহরে ভালভাবে চলাফেরা যাবে ৷ 


আমি তাহিয়া বাড়ি দিয়ে যখনি চলে আসব তখনি তাহিয়া আমাকে ডাকলো ৷ আর বলল আমাদের এখানে আজকের রাত টা খেয়ে তারপরে না হয় চলে যাবেন ৷


অবশ্য আমারও প্রচুর ক্ষুদা পেয়েছে তাই  সেই সকালে ভাতের বদলে বাবার কাছে মার খেয়ে বের হয়েছি ৷ তাই আর মানা করতে পারলাম না ৷ বাসার মধ্যে  ডুকে  দেখি সুন্দর একটা বাড়ি সবকিছু সাজানো গোছানো ৷  


তারপর তাহিয়া তার আম্মুকে সবকিছু বলল আর আমাকে দেখিয়ে দিল ৷ তাহিয়ার আম্মু আমার কাছে এসে কাদতে কাদতে বলল আমার মেয়েকে বাচিয়ে তুমি অনেক বড় সাহায্য করলে বাবা ৷ তোমার প্রতি আমরা সারাজীবন ঋনি হয়ে থাকব ৷ 


ছি ছি  খালাআম্মা কি বলছেন এসব মা কোনদিন ছেলের কাছে ঋনি থাকতে পারে ৷ আমিতো আপনার ছেলের মতোইতাই না ৷ 


তখনি তাহিয়া এসে বলল অাহহহহ মা সেই কখন থেকে ক্ষুদা পেয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও ৷ আমি হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসে  খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি আর তখনি তাহিয়ার বাবা আসল ৷ আমি আবার সব বাবাকে একটু ভয় পাই ৷ তাই সাথেসাথে দাড়িয়ে গেলাম ৷ 


তাহিয়ার বাবাঃ তাহিয়া কে এই ছেলে তাকে তো কোনদিন দেখেনি আমাদের এলাকায় ৷ 


তারপর তাহিয়া তার বাবা সব ঘটনা খুলে বলল ৷ আর তখন তাহিয়ার বাবা বলল  তোমর যেহেতু কেউ নাই তো কি হয়েছে আমরা তো আছি ৷ 


তাহিয়ার বাবা এরুপ কথা শুনে খুব খুশি হলাম ৷ আর আমরা সবাই মিলে খেতে বসলাম ৷  তখন তাহিয়ার  বাবা বলল  তোমার যখন থাকার কোন জায়গা নেই তাহলে আমাদের এখানে থাকবে ৷ আর সকালে কলেজ করবে ৷ আর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার সাথে আমার ব্যবসায় সাহায্য করবে ৷ 


আমি তাহিয়ার বাবার কথা শুনে খুব খুশি হলাম ৷ যাক অন্তত থাকার জায়গা আর একটাকাজ তো পেলাম ৷ 


তারপরে রাতের খাবার খেয়ে তাহিয়া আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল ৷  দুজনে মিলে রুমটা একটু গুছালাম ৷ আসলেই তাহিয়া মেয়েটা অনেক সুন্দর আর আনেক ভাল ৷ তবে তাহিয়া আমার দিকে  একটু পরপর আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে ৷ 


সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে তাহিয়ার সাথে তাদের কলেজে গেলাম ৷ ভর্তির কাজ সব শেষ হলে তিনটা ক্লাস করে বাইরে এসে দেখি  তাহিয়া আমার জন্য বাইরে দাড়িয়ে আছে ৷ 


তাহিয়াঃ কেমন হল আজকের ক্লাস গুলো ৷


আমিঃ অনেক ভালো আর কলেজ টা অনেক সুন্দর  খুব ভাল লাগছে আমার ৷


তারপর কলেজ থেকে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে খালুজানের 【তাহিয়ার বাবার 】সাথে তাদের দোকানে গেলাম ৷ খালুর দোকান টা অনেক বড় ৷ তাই আমি খালুর কাজে সাহায্য করলাম ৷


এভাবে চলতে থাকে আমার নতুন জীবন ৷ এখন আমি অনার্স ফাইনাল  ইয়ারে  ৷ আর তাহিয়া 3 বর্ষ ৷ রিমির মা বাবা আমাকে অনেক ভালবাসে একদম তাদের  নিজের ছেলের মত ৷


 আর তাহিয়ার  ছোট বোন টা তো আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা ৷ সবসময় ভাইয়া ভাইয়া করে ৷ আমিও তাকে খুব ভালবাসি ৷ তাহিয়ার  ছোট বোনের নাম হল রিক্ত


তবে তাহিয়ার  ব্যবহার দেখে আমি খুব অবাক হই ৷ মেয়েটা এত ভাল ৷ আর মাঝে মাঝে তাহিয়া আচরন দেখে মনে হয় ৷ তাহিয়া আমাকে খুব ভালবাসে ৷  আমার কখন কি লাগবে ৷ সবসময় চোখে চোখে রাখবে ৷ কেয়ার করবে মিষ্টি শাষন করবে ৷ তাহিয়া র মিষ্টি শাসন আর কেয়ার গুলো খুব ভাল লাগে ৷  


একদিন আমি কলেজে এক মেয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলছি আর সামনে গেটের দিকে যাচ্ছি ৷ আর তখনি দেখি সামনে  তাহিয়া  ৷ কিন্তু তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে ৷  


আমি আমার বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেই তাহিয়ার কাছে যাব তখনি ঠাসসসসসসসসস তাহিয়া আমাকে অনেক জোরে একটা থাপ্পর মারল ৷ থাপ্পর মেরে  তাহিয়া চলে গেল বাসাই ৷


আর আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি ৷ চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা জল বেড়িয়ে আসল ৷ আবার সেই  পুরোনে কথা মনে করে দিল ৷ 


দুবছর আগে ঠিক একই ভাবে আমাকে চড় মেরেছিল আমার এক খুবই কাছের মানুষ ৷ খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন ৷ তাহিয়া আমাকে থাপ্পর মারল ৷ কিন্তু দুবছর আগে আমাকে এভাবে থাপ্পড় মেরেছিল ৷ তখন হাজার গুন কষ্ট পেয়েছিলাম ৷ 


কলেজের পর আমি আর তাহিয়াদের বাড়ি যায় নি ৷ একটা ট্রেন লাইনে বসেছিলাম ৷ বসে থাকতে থাকতে আজ আর খালুর দোকানে যাওয়া হল না ৷ 


তাহিয়া আমাকে থাপ্পর মেরেছে এইজন্য আমি কষ্ট পাইনি ৷ তাহিয়া আমাকে থাপ্পড় মেরে আমার পুরোনো কথা মনে করে দিয়েছে ৷ তাই খুব কষ্ট হচ্ছে ৷ তাই বসে আছি আর সিগারেট খাচ্ছি ৷ 


হঠাঁ করে ফোনটা বেজে উঠল হাতে নিয়ে দেখি ৷ তাহিয়া ফোন দিয়েছে  আমি রিসিভ না করে  ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিলাম ৷ আবার পুরানো কথা ভাবছি ৷ ভাবতে ভাবতে রাত 10 টা বেজে গেল ৷ 


এবার ফোন হাতে নিয়ে দেখি খালু জানের 6 বার কল দিয়েছেন ৷ আবার ফোন এসেছে খালুর ৷ আমি রিসিভ করলাম খালু বলল মাহমুদ তুমি কোথায় কত টেনশন হচ্ছে তুমি যান তাড়াতাড়ি বাসাই আস ৷ জ্বী খালু আসছি ৷ কিছুক্ষন হাটার পর বাড়ি চলে আসলাম ৷ কলিং বেল চাপতেই খালা দড়জা খুলে দিল ৷ 


খালাঃ কোথায় ছিলে তুমি বাবা সেই কখন থেকে বসে আছি জানো ৷ যাও হাত মুখ ধুয়ে আস ৷ 


আমিঃ জ্বী খালা আসছি ৷


তারপর ভিতরে ডুকতেই রিক্ত আমার পিচ্চি বোনটা দৌড়িয়ে এসে আমাকে জরিয়ে দরে কান্না করছে আর বলছে ৷ 


ভাইয়া কোথাই ছিলে তুমি যান আমি কত কান্না করছি  তোমার জন্যা ৷ আর আপু এখনও কান্না করছে তুমি আসনি তাই ৷


আর হবেনা আমার পাগলি বোনটি এবারের মত ক্ষমা করে দাও আমাকে ৷  কিন্তু  তাহিয়া কান্না করছে শুনে খুব খারাপ লাগছে ৷  


আমি এবার তাহিয়ার  রুমের দিকে গেলাম আর তাহিয়া বলে ডাকদিলাম ৷  তাহিয়া আমার দিকে  যেই তাকলো আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম ৷ তাহিয়া চোখ লাল ও ফুলে আছে ৷ হয়তো কান্না করে এ অবস্থা হয়েছে ৷ 


এবার তাহিয়া দৌড়িয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না করে দিল ৷ আমি তো বেশ অবাক হলাম ৷ 


..................চলবে..................



কোন মন্তব্য নেই